রাণীনগরের দাউদপুর-বেলোবাড়ি গ্রামীণ পাঠাগারে বাড়ছে বইপ্রেমীদের উপচেপড়া ভিড়


মাহবুব,স্টাফ রিপোর্টার:


‘জ্ঞান চর্চা ও বিকাশের ক্ষেত্রে পাঠাগার প্রত্যেক মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ’- এই প্রতিপাদ্য বিষয়কে সামনে নিয়ে নওগাঁর রাণীনগরের দাউদপুর ও বেলোবাড়ি এই দুই গ্রামের নামে পথচলা শুরু করে দাউদপুর-বেলবাড়ী একতা সংঘ পাঠাগার। এই গ্রামের কৃতী সন্তান আমেরিকায় পিএইচডি অধ্যয়নরত রুয়েটের সহকারি অধ্যাপক সজল আহম্মেদের সার্বিক দিকনির্দেশনায় এই পাঠাগার স্থাপন করা হয়।


বর্তমানে পাঠাগারে দুই হাজারের বেশি বই রয়েছে। প্রতিদিনই পাঠাগারের যুব সদস্যরা স্বেচ্ছা শ্রমের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে। যদি সরকারি কিংবা ব্যক্তি পর্যায়ে সহযোগিতা পাওয়া যেতো তাহলে পাঠাগারটি বইয়ের দিকে আরো সমৃদ্ধশালী হতো এবং সামাজিক কর্মকাণ্ড আরো ব্যাপক ভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হতো বলে মনে করছেন পাঠাগার কমিটির সদস্যবৃন্দ।


গ্রামের রাস্তা ধরে পথ চলতেই রাস্তার পাশে চোখে পড়বে একটি ঘরের ভিতর টেবিলে বসে বিভিন্ন বয়সের পাঠক হাতে বই নিয়ে পড়ায় ব্যস্ত। চলতি বছরের মার্চ থেকে পথচলা শুরুর পর থেকে পাঠাগারে বই প্রেমীদের আনাগোনা প্রতিনিয়তই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সব বয়সের পাঠক পাঠাগারে এসে দিনের কিছুটা সময় পছন্দের বই পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন।


এছাড়া এই পাঠাগার থেকে যে কোন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে প্রয়োজন মাফিক বই ও গাইড বই সংগ্রহ করে নিয়মিত পড়ালেখা করছে। বিশেষ করে এলাকার গরিব ও অসহায় শিক্ষার্থীরা এই পাঠাগার থেকে বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবই সংগ্রহ করে বাড়িতে পড়ালেখা করছে।


পাঠাগারে রয়েছে পাঠকদের জন্য নানা রকমের সুযোগ-সুবিধা। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পাঠাগারে এসে বই পড়লে পাঠকদের বিনামূ


ল্যে চা পান করানো হয়। পাঠাগারে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সের পাঠকদের পছন্দের কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন রকমের বই রাখা হয়েছে। পাঠাগারের পক্ষ থেকে পাঠাগারের সদস্যদের উদ্যোগে এলাকার চলমান রাখা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযান ইতোমধ্যেই ব্যাপক সুনাম কুড়াচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিনই পাঠাগারটি সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ নামিদামি ব্যক্তিরা পরিদর্শন করছেন।


নওগাঁ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. শরিফুল ইসলাম খাঁন বলেন, নিভৃত পল্লীতে এই ধরনের পাঠাগার সত্যিই এক বিস্ময়। বিশেষ করে পাঠাগার পরিচালনা কমিটির সদস্যদের উদ্যোগে অভিভাবক সমাবেশ, এলাকার কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা প্রদানের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করা, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে কুইজ প্রতিযোগিতা, এলাকার বিভিন্ন এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযান কার্যক্রমসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। পাঠাগারে থাকা হরেক রকমের বইয়ের সমারোহ একজন মানুষকে মুগ্ধ করবে। পাঠাগারের এমন কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পারলে একদিন এই পাঠাগার দেশজুড়ে পরিচিতি পাবে নিঃসন্দেহে।


পাঠাগারের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমাদের কৃতী সন্তান সজলের স্বপ্নকে পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে দিতে আমরা পাঠাগারের ভক্ত হয়ে গেছি। একটি পাঠাগার পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আলোকবর্তিকা এই কথাটি প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে আমরা নিরলসভাবে স্বেচ্ছাশ্রমের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছি।


পাঠাগারের আলোয় আমরা পুরো পৃথিবীকে বদলে দিতে চাই। তাই প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে সেই বদলে দেওয়ার যাত্রা শুরু করেছি। এই পাঠাগারের হরেক রকমের বইয়ের জ্ঞানের আলোয় এলাকার যুব সমাজ থেকে শুরু করে সকল শ্রেণিপেশার মানুষদের আলোকিত করতে চাই। শতবছর ধরে পাঠাগারের এমন সামাজিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার মাধ্যমে দাউদপুর-বেলবাড়ি গ্রামকে পৃথিবীবাসী নতুন করে জানবে এমনটিই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন আবুল কালাম আজাদ।


উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাকিবুল হাসান জানান একজন মানুষের পরম বন্ধু হচ্ছে বই। বই কখনোও মানুষের শত্রু হতে পারে না। কোন বিনিময় ছাড়াই সঠিক জ্ঞান, পরামর্শ ও জীবনকে আলোর পথের যাত্রী করতে বই পড়ার কোন বিকল্প নেই। আর বই পড়ার একটি পরিচ্ছন্ন স্থান হচ্ছে পাঠাগার। প্রত্যন্ত গ্রামের মাঝে এই ধরনের একটি পাঠাগার সত্যিই অন্ধকারের মাঝে আলোর দিশা।


যে মানুষ যত বেশি বই পড়বে সেই মানুষটি নিজেকে তত বেশি আলোকিত মানুষ হিসেবে বিনির্মাণ করতে পারবেন। একটি সুন্দর ও জ্ঞানে সমৃদ্ধ একটি সমাজ বিনির্মাণ করতে অত্র এলাকা সবাইকে পাঠাগারে এসে প্রতিদিনের একটি নির্দিষ্ট সময় নিজের পছন্দমাফিক বই পড়ার আহ্বান জানান এই কর্মকর্তা। আগামীতে পুরো দেশজুড়ে এই গ্রামীণ পাঠাগারটি নানা কর্মের মাধ্যমে একটি মডেল পাঠাগার হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।

News Publisher (Editor Cheif)

মহাদেবপুরের খবর এর সকল নিউজের সঠিক এডিটিং কনফার্মেশন এর দায়িত্বে নিয়োজিত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন